
মেহেদী হাসান আরফাত
টেকনাফ উপজেলা প্রতিনিধি
টেকনাফ পৌরসভার ইসলামাবাদে বিজিবির অভিযান, রাজমিস্ত্রি পেশার আড়ালে মাদক ব্যবসায়ী ৯,৪০০ ইয়াবাসহ রোহিঙ্গা স্বামী-স্ত্রী গ্রেফতার।
ইয়াবা মাদক চোরাচালান দমনে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ট্যাবলেটসহ এক পাচারকারী রোহিংগা দম্পতিকে হাতেনাতে গ্রেফতার করেছে।
নিজস্ব গোয়েন্দা সূত্রে বিজিবি জানতে পারে, মায়ানমার থেকে পাচার হওয়া ইয়াবার একটি চালান টেকনাফ পৌরসভার ০৪ নং ওয়ার্ডের ইসলামাবাদ এলাকায় অত্যন্ত গোপনে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি)-এর অধিনায়ক কয়েকটি চৌকস দল মোতায়েনের মাধ্যমে একটি বিশেষ অভিযানের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, আজ ০৫ অক্টোবর ২০২৫ তারিখ রাত ০২:০০ ঘটিকায় অধিনায়কের নেতৃত্বে টেকনাফ ব্যাটেলিয়ানের একাধিক টহল দল ইসলামাবাদ এলাকায় বিশেষ অভিযান শুরু করে। এ সময়, ইসলামাবাদ এলাকার নেজাম নামক এক ব্যক্তির ভাড়া বাসায় তল্লাশি চালিয়ে মোহাম্মদ আইয়ুব (৩৭) এবং তার স্ত্রী রাবিয়া (৩৫)-কে আটক করা হয়। তাদের স্বীকারোক্তি এবং বিজিবি’র বিশেষ ডগ স্কোয়াডের (নারকোটিক্স) অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাসার ভিতরে অতি সতর্কতার সঙ্গে লুকিয়ে রাখা হয়েছে অবৈধ মাদক ইয়াবা। আইয়ুবের বাসা থেকে মোট ৯,৪০০ (নয় হাজার চারশত) পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।
তল্লাশি ও প্রাথমিক তদন্তে প্রাপ্ত নথিপত্র বিশ্লেষণে পাওয়া যায় যে, আটককৃত আসামী মোহাম্মদ আইয়ুব ২৭ নং জাদিমোড়া এফডিএমএন ক্যাম্পের এ-১ ব্লকের একজন FDMN (Forcibly Displaced Myanmar Nationals বা বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক) সদস্য। প্রতিমাসেই সে জাদিমোড়া ক্যাম্পে গিয়ে রেশন সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। পরে, মোহাম্মদ আইয়ুব প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে যে, সে দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পের বাইরে অবৈধভাবে বসবাসরত এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। সে জানায়, ক্যাম্পের নির্দিষ্ট ঠিকানায় না থেকে রাজমিস্ত্রি পেশার আড়ালে ইসলামাবাদ এলাকার একাধিক বাসা পরিবর্তন করে ভাড়া নিয়ে বসবাস করছিল। সর্বশেষ বাসাটিতে সে গত ০৮ বছর যাবৎ ভাড়া আছে। এযাবৎ সে অটো মেকার, আটো চালক এবং সর্বশেষ রাজমিস্ত্রির পেশার আড়ালে মাদক ব্যবসায় জড়িত। সে মাদক কারবারি ঈসমাইলের সহযোগী এবং মায়ানমার থেকে ইয়াবার চালান এনে একাধিক হাত বদলে স্থানীয় ও অন্য মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে দিত। তার স্ত্রী রাবিয়াও এই অবৈধ কার্যক্রমে তার সহযোগী ছিল। মাদক ব্যবসার অপরাধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ধৃত আসামিদেরকে স্থানীয় থানায় হস্তান্তর এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন। তবে, এভাবে ক্যাম্পের বাইরে FDMN সদস্যদের অবৈধভাবে বসবাস এবং মাদক পাচারের মতো গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়া সীমান্ত নিরাপত্তা ও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য এক বড় উদ্বেগের কারণ। পলাতক মাদক কারবারি ইসমাইলের খোঁজে অভিযান চলছে। বিশেষ অভিযানে গ্রেফতারকৃত আসামী ও জব্দকৃত আলামতের বিবরণ:
গ্রেফতারকৃত ও পলাতক আসামীদের নাম ও ঠিকানাঃ
মোহাম্মদ আইয়ুব (৩৭), (এফডিএমএন সদস্য,এফসিএন কার্ড নং ২৮৬৭৮৬), পিতা-মাবুদ কামাল, মাতাঃ সারা খাতুন।
ঠিকানাঃ গ্রাম-ইসলামাবাদ, ০৪ নং ওয়ার্ড, টেকনাফ পৌরসভা, জেলা-কক্সবাজার।
রাবিয়া (৩৫), স্বামী- মোহাম্মদ আইয়ুব (এফডিএমএন সদস্য)
ঠিকানাঃ গ্রাম-ইসলামাবাদ, ০৪ নং ওয়ার্ড, টেকনাফ পৌরসভা, জেলা-কক্সবাজার।
পলাতক আসামীঃ
মোঃ ইসমাইল, পিতা-অজ্ঞাত।
ঠিকানাঃ গ্রাম-ইসলামাবাদ, ০৪ নং ওয়ার্ড, পোস্ট+থানা-টেকনাফ, জেলা-কক্সবাজার।
এই সফল মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানটি সীমান্ত সুরক্ষা ও যেকোনো ধরনের অপরাধ দমনে বিজিবি’র জিরো টলারেন্স নীতিতে অবিচল থাকবার প্রতিফলন। FDMN পরিচয়ে ক্যাম্পের বাইরে অবৈধভাবে বসবাস করে যারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর নজরদারি এবং প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি অব্যাহত থাকবে।

অনলাইন ডেস্কঃ 
















