(নেত্রকোনা বারহাট্টা প্রতিনিধি)
কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে বারহাট্টার সবজির বাজারে। দাম বেড়েছে প্রায় সব ধরনের সবজির। বেশিরভাগ সবজির দামই কেজি প্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম, যা বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সপ্তাহ জুড়ে সরেজমিনে উপজেলা সদরের গোপালপুর বাজার, আসমা বাজার, সাহতা বাজার, বাউসী বাজার, রায়পুর বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবধরণের সবজির দাম আগের তুলনায় কেজি প্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
সবজির বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, সবজির দাম (প্রতি কেজি) পটল/ঝিঙা: ৬০-৭০ টাকা, ঢেঁড়স: ৫৫-৬০ টাকা, করলা: ৬০-৭০ টাকা, আলু: ৩৫-৪০ টাকা, শসা: ৭০-৮০ টাকা, বরবটি প্রতি আঁটি: ৬০ টাকা, কচুর লতি: ৮০-৯০ টাকা, বেগুন: ৬০-৭০ টাকা, টমেটো: ৮০-৯০ টাকা, কাকরোল: ৭০-৮০ টাকা, পেঁপে: ৩০-৪০ টাকা, কাঁচা কলা প্রতি হালি: ৪০-৪৫ টাকা, লাউ প্রতি পিস: ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া: ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে ঊর্ধ্বমুখী কাঁচা মরিচের দাম যা বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৩০০ টাকা দরে। বিক্রেতারা বলছেন, আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে জমিতে সবজির চাষ কম হয়। তাছাড়া নিম্নচাপের প্রভাবে কিছুদিন ধরে টানা বৃষ্টিতে নিচু এলাকায় পানি বাড়ার কারণে সবজি আর আগের মতো পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বাজারে সবজি কম আসছে। তাই দামও আগের তুলনায় বেড়েছে। পাশাপাশি পরিবহন ব্যয়ও বেড়ে গেছে। ক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টিকে অজুহাত করে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
উপজেলার গোপালপুর বাজারের সবজি বিক্রেতা সেলিম মিয়া, হারিস উদ্দিন, আসমা বাজারের জসিম মন্ডল, তপন সরকারের সাথে কথা বললে তারা জানান, সপ্তাহ ধরে সবজির বাজার একই রকম যাচ্ছে। বাজার ভেদে কোনো কোনো সবজির দাম ১৫-২০ টাকা কম-বেশি হয়। পাইকারি বাজারের দাম খুচরা বাজারে হিসাব করলে হবে না। কারণ পাইকারি বাজার থেকে পণ্য কেনার পর আমাদের তা পরিবহন ব্যয় ও শ্রমিক দিয়ে আনতে হয়। এরপর বাজারে নিয়ে বসলে সেখানেও আলাদা খরচ দিতে হয়। পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিলের জন্য আলাদা টাকা দিতে হয়। অনেক সময় পণ্য নষ্ট হলে লোকসান আমাদেরই গুনতে হয়। তাই খুচরা বাজারের সঙ্গে পাইকারি বাজারের তুলনা করে লাভ নেই। তাছাড়া এখন শীত মৌসুম না হওয়ায় কিছু কিছু সবজির দাম বাড়তি যাচ্ছে। এর কারণ হলো বাজারে সরবরাহ খুবই কম তাই দাম একটু বাড়তি।
তারা বলেন, গত সপ্তাহে শাকসবজি যে দামে বিক্রি হয়েছে, তা চলতি সপ্তাহের শেষে কেজি প্রতি ১০-২০ টাকা বেড়েছে। তবে বৃষ্টির কারণে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। গত সপ্তাহে যে মরিচ ৭০-৮০ টাকা দরে কিনেছি সেই মরিচ এখন ২৫০-২৬০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে।
সবজি দাম বৃদ্ধির কারণ জানিয়ে সাহতা বাজারের সবজি বিক্রেতা তৈয়ব আলী বলেন, বাজারে এখন সবজির সরবরাহ কম। মূলত বর্ষা মৌসুমে সবজির বাজারে সরবরাহ কম থাকে সে কারণেই দাম বাড়তি যাচ্ছে। নতুন সবজি উঠতে শুরু করলে সবজির দাম আবার কিছুটা কমে আসবে।
সবজির চড়া দামের বিষয়ে আসমা বাজার কাঁচামাল আড়ত মালিক শফিকুল ইসলাম বলেন, সপ্তাহ জুড়ে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। যে কারণে সবজির উৎপাদন ও বাজারে যোগান কম। ফলে বাজারে সবজির দাম বেড়েছে। তবে গ্রামের বাজারগুলোতে সবজির দাম শহরের বাজারের চেয়ে কিছুটা কম। কাঁচা মরিচের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বৃষ্টির পানিতে কাঁচা মরিচের গাছ মারা যাচ্ছে। তাই উৎপাদন কম হচ্ছে। দাম তো বাড়বেই। টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে কাঁচা মরিচের দাম আরও বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।
উপজেলা সদরের গোপালপুর বাজারে বাজার করতে আসা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক কান্তি রঞ্জন রায়ের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, বাজারে দেখলাম সবজির দাম খুব চড়া। এতো দাম দিয়ে সবজি তো সাধারণ মানুষ কিনে খেতে পারে না। এজন্য দরকার সরকারি মনিটরিং ব্যবস্থা, কি কারণে সবজির দাম বাড়ছে, কারা বাড়াচ্ছে এসব বিষয় তদারকি করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। নয়তো যে যার মত করে সবজির দাম বাড়িয়ে রাখবে।
আসমা বাজারের আরেক ক্রেতা আব্দুল হাই বলেন, বাজারে সবজির দাম বেড়েছে। তবে কাঁচা মরিচের দাম নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগেও যে মরিচ কেজি প্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন সেটির দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। বৃষ্টিপাত বেশি, মরিচের গাছ মারা যাচ্ছে। এসব অজুহাতে গলাকাটা দাম নিচ্ছেন দোকানীরা। আমাদের তো উপায় নেই। দাম বাড়ায় সীমিত পরিমাণে।কাঁচা মরিচ কিনেছি। বাজারে সব ধরনের সবজির দাম বাড়তি প্রতিদিনই সবজির দাম বেড়েই চলছে। বছরের সব সময়ই দাম বাড়ে, কিন্তু বৃষ্টি হলেই যেন ব্যবসায়ীদের জন্য উৎসব শুরু হয়।
হঠাৎ কাঁচা মরিচের দাম বৃদ্ধি বিষয়ে উপজেলার একাধিক ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, গত সপ্তাহে টানা বৃষ্টিকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে কিছু পাইকারি ব্যবসায়ীরা মরিচ মজুত করেছেন। এতে সরবরাহ সংকট আরও প্রকট হয়েছে। ফলে খুচরা বাজারে দাম হু হু করে বেড়েছে। গত সসপ্তাহে এ বাজার থেকেই ৯০-১০০ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ কিনেছি। কিন্তু এখন কিনতে হলো ৩০০ টাকায়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খবিরুল আহসান বলেন, "প্রাকৃতিক কারণে যদি সরবরাহ কমে, তাহলে কিছুটা দাম বাড়া স্বাভাবিক। তবে কেউ যদি কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাজারগুলোতে এখন মরিচের সঙ্গে সঙ্গে অন্য শাকসবজির দামও ঊর্ধ্বমুখী। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে যারা দৈনিক আয় দিয়ে খরচ চালান।
সম্পাদক - মোঃ মনির হোসেন