ঢাকা , বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাঁচবিবির ভাল্লুকগাড়ি গ্রামে রাস্তার জায়গা জবরদখল: মামলা-হামলায় অতিষ্ঠ ৪ ভাইয়ের পরিবার

 

আল আমিন জয়পুরহাট প্রতিনিধি:

 

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার আটাপুর ভাল্লুকগাড়ি গ্রামে রাস্তার জায়গা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে তীব্র বিরোধ ও দখলদারি। এ নিয়ে মামলা-হামলায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন মৃত আফতাবের পুত্র আতোয়ার রহমানসহ চার ভাইয়ের পরিবার। দীর্ঘ ৪-৫ বছর ধরে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ-আপত্তি জানালেও মিলছে না কোনো সুরাহা।

 

ভুক্তভোগী আতোয়ার রহমান জানান, তাদের পরিবারের একমাত্র সম্বল হলো এই ভিটেমাটি। এর ওপরই তারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম বসবাস করে আসছেন। কিন্তু একই গ্রামের আফজাল, আতাউল ও মনিরুজ্জামান বাবু মিলে দীর্ঘদিন ধরে এই ভিটের সামনের রাস্তাটি জবরদখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। আতোয়ারের দাবি, যে রাস্তাটি বের করার জন্য প্রতিপক্ষ উঠেপড়ে লেগেছে, সেটির কোনো নকশা বা সরকারি অনুমোদন নেই।

 

হামলা-হুমকি ও ভাঙচুরের অভিযোগ

চলতি বছরের ৩ এপ্রিল প্রতিপক্ষরা দলবদ্ধভাবে আতোয়ারের বাড়ির মাটির দেওয়াল ও বাড়ির সামনের বসার ইটের জায়গা ভেঙে ফেলে। এ সময় প্রতিবাদ করলে আতোয়ারকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। পরে থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়। একইসঙ্গে আতোয়ার অভিযোগ করেন, তার ছোট ভাই নাইদুলকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জেল খাটানো হয়েছে এবং মামলা চালাতে তাদের পরিবারকে অনেক আর্থিক ক্ষতির শিকার হতে হয়েছে।

 

সম্প্রতি আতোয়ারের বাড়ির মূল দরজার সামনের সীমানা প্রাচীর ভাঙতে গেলে তাদের ওপর ফের হামলা চালানো হয়। এতে আতোয়ারের মাথা ফেটে গুরুতর আহত হন।

 

থানায় সমঝোতা বৈঠক ও নতুন বিবাদ‌ ‌‌,এই দীর্ঘ দ্বন্দ্বের পর থানার মধ্যস্থতায় উভয়পক্ষকে নিয়ে একটি সমঝোতা বৈঠক বসে। বৈঠকে আতোয়ার ৩ ফুট প্রশস্ত রাস্তার জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে রাজি হন। গ্রামবাসীও তা মেনে নেয়। তবে পরবর্তীতে গত সোমবার স্থানীয় ইউপি সদস্য একরামুল হোসেনের উপস্থিতিতে সরকারি আমিন দিয়ে সীমানা পরিমাপ করে ৭ ফুট প্রশস্ত রাস্তা নির্ধারণ করা হয়। আতোয়ারের দাবি, এভাবে ৭ ফুট রাস্তা বের করার ফলে তার বাড়ির সীমানা প্রাচীর ও দরজা ভেঙে গেছে, যা তিনি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না।

 

ভুক্তভোগী পরিবারের আর্তনাদ

আতোয়ারের ছোট ভাই মতিয়ার রহমান অভিযোগ করেন,“রাস্তার জায়গা নিয়ে বিরোধ হতেই পারে, কিন্তু আমার টিনের চালাঘর ভাঙার অধিকার কারও নেই। এত অত্যাচার আর সহ্য করতে পারছি না। এ গ্রামেই আমরা আর থাকবো না।”প্রতিপক্ষ আফজাল জানান,২০ বছর ধরে আতোয়ার আমাদের প্রায় ২ শতক জমি দখল করে রেখেছিল। এখন আমরা সেই জমি ফেরত নিয়ে ঘর তুলছি। তারা চাইলে সরকারি আমিন দিয়ে মাপযোগ করুক। প্রমাণ হলে আমরা জমি ছেড়ে দেব।”

 

এ বিষয়ে ইউপি সদস্য একরামুল হোসেন বলেন,দীর্ঘ ৪-৫ বছর ধরে এ রাস্তার জায়গা নিয়ে দুপক্ষের বিরোধে গ্রামের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। থানা পুলিশের নির্দেশে সরকারি আমিন এনে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা চাই দ্রুত এই সমস্যার মীমাংসা হোক।”

বিচার না পেলে বাড়িঘর ছেড়ে দেশান্তর হবারও আক্ষেপ জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার। এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত ও স্থায়ী সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।

ট্যাগঃ
জনপ্রিয় সংবাদ

পাঁচবিবির ভাল্লুকগাড়ি গ্রামে রাস্তার জায়গা জবরদখল: মামলা-হামলায় অতিষ্ঠ ৪ ভাইয়ের পরিবার

আপডেট টাইমঃ ১৯ ঘন্টা আগে

 

আল আমিন জয়পুরহাট প্রতিনিধি:

 

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার আটাপুর ভাল্লুকগাড়ি গ্রামে রাস্তার জায়গা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে তীব্র বিরোধ ও দখলদারি। এ নিয়ে মামলা-হামলায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন মৃত আফতাবের পুত্র আতোয়ার রহমানসহ চার ভাইয়ের পরিবার। দীর্ঘ ৪-৫ বছর ধরে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ-আপত্তি জানালেও মিলছে না কোনো সুরাহা।

 

ভুক্তভোগী আতোয়ার রহমান জানান, তাদের পরিবারের একমাত্র সম্বল হলো এই ভিটেমাটি। এর ওপরই তারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম বসবাস করে আসছেন। কিন্তু একই গ্রামের আফজাল, আতাউল ও মনিরুজ্জামান বাবু মিলে দীর্ঘদিন ধরে এই ভিটের সামনের রাস্তাটি জবরদখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। আতোয়ারের দাবি, যে রাস্তাটি বের করার জন্য প্রতিপক্ষ উঠেপড়ে লেগেছে, সেটির কোনো নকশা বা সরকারি অনুমোদন নেই।

 

হামলা-হুমকি ও ভাঙচুরের অভিযোগ

চলতি বছরের ৩ এপ্রিল প্রতিপক্ষরা দলবদ্ধভাবে আতোয়ারের বাড়ির মাটির দেওয়াল ও বাড়ির সামনের বসার ইটের জায়গা ভেঙে ফেলে। এ সময় প্রতিবাদ করলে আতোয়ারকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। পরে থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়। একইসঙ্গে আতোয়ার অভিযোগ করেন, তার ছোট ভাই নাইদুলকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জেল খাটানো হয়েছে এবং মামলা চালাতে তাদের পরিবারকে অনেক আর্থিক ক্ষতির শিকার হতে হয়েছে।

 

সম্প্রতি আতোয়ারের বাড়ির মূল দরজার সামনের সীমানা প্রাচীর ভাঙতে গেলে তাদের ওপর ফের হামলা চালানো হয়। এতে আতোয়ারের মাথা ফেটে গুরুতর আহত হন।

 

থানায় সমঝোতা বৈঠক ও নতুন বিবাদ‌ ‌‌,এই দীর্ঘ দ্বন্দ্বের পর থানার মধ্যস্থতায় উভয়পক্ষকে নিয়ে একটি সমঝোতা বৈঠক বসে। বৈঠকে আতোয়ার ৩ ফুট প্রশস্ত রাস্তার জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে রাজি হন। গ্রামবাসীও তা মেনে নেয়। তবে পরবর্তীতে গত সোমবার স্থানীয় ইউপি সদস্য একরামুল হোসেনের উপস্থিতিতে সরকারি আমিন দিয়ে সীমানা পরিমাপ করে ৭ ফুট প্রশস্ত রাস্তা নির্ধারণ করা হয়। আতোয়ারের দাবি, এভাবে ৭ ফুট রাস্তা বের করার ফলে তার বাড়ির সীমানা প্রাচীর ও দরজা ভেঙে গেছে, যা তিনি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না।

 

ভুক্তভোগী পরিবারের আর্তনাদ

আতোয়ারের ছোট ভাই মতিয়ার রহমান অভিযোগ করেন,“রাস্তার জায়গা নিয়ে বিরোধ হতেই পারে, কিন্তু আমার টিনের চালাঘর ভাঙার অধিকার কারও নেই। এত অত্যাচার আর সহ্য করতে পারছি না। এ গ্রামেই আমরা আর থাকবো না।”প্রতিপক্ষ আফজাল জানান,২০ বছর ধরে আতোয়ার আমাদের প্রায় ২ শতক জমি দখল করে রেখেছিল। এখন আমরা সেই জমি ফেরত নিয়ে ঘর তুলছি। তারা চাইলে সরকারি আমিন দিয়ে মাপযোগ করুক। প্রমাণ হলে আমরা জমি ছেড়ে দেব।”

 

এ বিষয়ে ইউপি সদস্য একরামুল হোসেন বলেন,দীর্ঘ ৪-৫ বছর ধরে এ রাস্তার জায়গা নিয়ে দুপক্ষের বিরোধে গ্রামের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। থানা পুলিশের নির্দেশে সরকারি আমিন এনে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা চাই দ্রুত এই সমস্যার মীমাংসা হোক।”

বিচার না পেলে বাড়িঘর ছেড়ে দেশান্তর হবারও আক্ষেপ জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার। এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত ও স্থায়ী সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।