
তৌফিকুর রহমান তাহের:
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
সুনামগঞ্জে দিরাই-শাল্লা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে নলকূপে মটারেও মিলছে না পানি যেসব এলাকায় পানি ছিল সহজলভ্য,এখন সেখানেই তীব্র পানির সংকট।প্রতিগ্রামে ২/৪/৫টা নলকূপে পানি উঠলেও সেইসব নলকূপগুলোতে মানুষের উপছেপড়া ভীড়।চারদিকে শুধু পানি নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা সমালোচনা।কেউ কেউ মেস্তুুরী এনে পাইপ পরিবর্তন মটর মাটির নীচে গর্ত করে বসাচ্ছে,আবার নতুন মটর নিয়ে আসছে,বাড়ছে হয়রানি, কিন্তু সুফল পাচ্ছেনা অনেকেই জানায় ভুক্তভোগীরা। কারো পানি উঠছে কারো আবার যেই-সেই।চারদিকে শুধু পানি নিয়ে হাহাকার।খুব কষ্টকরে চলছে পানি খাওয়া।খুব হিসাব করে পানি ব্যাবহার করতে হয় জানায় ভোক্তভোগী ওয়াহিদুল তালুকদার রবিন।কিন্তু পুকুর ও মরা নদীগুলো শুকিয়ে যাওয়াতে মানুষের গোসল করা পর্যন্ত কষ্ট হচ্ছে। কিছুতেই সম্ভব হচ্ছেনা।মুরুব্বিরা বলেন এবুঝি কিয়ামতের আলামত কেউবা বলছে এখন আর কিছুই বুঝিনা।প্রচন্ড গরমে চলে বৈশাখী কাজ কিন্তু প্রতিটি মানুষ ভুগছেন পানির নিদারুণ নিষ্ঠুর সংকটে।
এখানে অসংখ্য ডোবা,খাল ও নদী থাকার পরও চলছে হাহাকার।পানির অভাবে সংসারের কাজকর্ম হতে শুরু করে ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের কাজও ব্যাহত হচ্ছে। ফলে দিশেহারা হয়ে পরেছে হাজার হাজার মানুষ।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের উপ-সহকারী প্রকৌশলি মৃদুল কান্তি সরকার বলছেন,ভূগর্ভস্থ থেকে অপরিকল্পিতভাবে পানি তোলার কারণে ক্রমাগত নামছে পানির স্তর। আবার জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে স্বাভাবিকভাবে বৃষ্টি হচ্ছেনা। এর ফলে নলকূপেও উঠছে না পানি। তবে বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলেও আশা করছেন তিনি।
খোঁজ নি জান যায় দুটি উপজেলায় ১টি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বৃষ্টির অভাবে পুকুর, হাওর-বাঁওড়, খাল-বিল নদী-নালার পানি শুকিয়ে গেছে অন্যদিকে এলাকার অধিকাংশ নলকূপে পানি উঠছে না। গত ২/৩ মাস আগ থেকেই নলকূপে পানি ওঠা কমে যায়। আর মার্চের মাসের শুরু থেকে এই সমস্যা তীব্র আকার ধারন হতে শুরু করেছে শেষের দিকে শতকরা ৭০%নলকূপ/মটরবন্ধ হয়ে যায়।সে কারণে সংকটের কারণে সামর্থ্যবান কিছুসংখ্যক লোকজনের বাড়িতে ডিপ টিউবওয়েল বসিয়ে নিচ্ছেন। তবে অনেক ডিপ টিউবওয়েলেও উঠছেনা পানি।
সরেজমিনে উপজেলার আটগাঁও, নিজগাঁও,বাজারকান্দি,বড়গাঁও,কাশিপুর,শ্যামারচর,উজানগাঁ’ও,পেরুয়া, গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। অনেকে টিউবওয়েলের সঙ্গে মোটর বসিয়েছেন। তবে সেখানেও পানির দেখা মিলছে না। সে সময় বাজারকান্দিগ্রামের বর্তমান মেম্বার রবীন্দ্র সরকার সোনাকানী গ্রামের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য নুরজাহান,রাহুতলা স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা স্বপ্না রায় বলেন,আমাদের গ্রামে পানির জন্য হাহাকার।গ্রামের প্রায় টিউবওয়েলে পানি উঠছেনা।সমাজকর্মী আরমিন আক্তার বলেন,পানির অতিরিক্ত অপচয়ের কারণে আজকের এঅবস্হা।
বাজারকান্দি গ্রামের মনিন্দ্র সরকার বলেন, আমি বয়স্ক লোক ২০মিনিট ধরে টিউবওয়েলে চাপাচাপি করেও একটু পানি বের করতে পারলাম না। পানির জন্য অনেক কষ্টে আছি বলে তিনি জানান।আটগাঁও গ্রামের সজিব মিয়া বলেন বৈশাখী কামকাজ রেখে বাজারথেকে পাইপ কিনেএনে লাগালাম ২দিন যাবৎ কষ্ট করলাম আগে চাপদিলে একটু একটু আসতো এখন আর পানি আসেইনা।অনেকই জানান টিওবয়েলর আর কাজ নেই তাই টিউবওয়েলটি বেঁধে রেখেছি।পানির জন্য কোথায় যাব পাশে নদীও নেই।যাদের কাছে নদী আছে তারা হয়তো একটু হলেও শান্তিতে আছে।কারো কারো জন্য নদী অনেক দূরে বলে জানান তিনি।
সরকারি চাকুরিজীবী মানসিংহ চৌধুরী মনুজ বলেন,মটর দিয়ে একটুও আধটু পানি তুলতে পারি নদীর সাথে বাড়ি থাকায় একটু স্বস্তিমিলে দুধ না পাইয়া আরচিত কামুর আরকি?
কাশিপুরের তোফাজ্জল মিয়া ও বর্তমান মেম্বার রাহুল চন্দ্র দাস বলেন, আমার জানা মতে গ্রামের ১০/১৫ টি টিউবওয়েলে পানি উঠছে গ্রামের অন্যসব টিউবওয়েল অকেজো।পানির মারাত্মক সমস্যায় ভুগছেন গ্রামবাসী।
দিরাই-শাল্লা উপজেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলীগণ বলেন,এই এলাকায় ধান চাষ করতে গিয়ে বিএডিসি’র পাম্পের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ থেকে প্রচুর পানি উত্তোলন করে জমিতে দেওয়া হয়। এগুলো বন্ধ হলে আর বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে জানান।