
বারহাটা প্রতিনিধি।
নেত্রকোণায় সরকারি গুদামে ধানের ব্যবসা করতেন ওসিএলএসডি-
কৃষকের নামে নিজেই ধান কিনে সরকারি খাদ্যগুদামে মজুদ রেখে ব্যবসা করতেন তিনি। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) তদন্তে বেরিয়ে আসে এসব তথ্য । এই অভিযোগ নেত্রকোণার বারহাট্টা উপজেলাসদর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) উপ-পরিদর্শক মোঃ হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে। মজুদ কেলেংকারির এই অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় তাকে স্ট্যান্ডরিলিজ করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ খবিরুল আহসান শনিবার (১২ জুলাই) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) ওসিএলএসডি মোঃ হুমায়ুন কবীর বারহাট্টা থেকে ছাড়প্রাপ্ত হন। বিষয়টি নিশ্চিত করে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় ময়মনসিংহের প্রধান সহকারী মোঃ তোফায়েল আহমদ জানান, মোঃ হুমায়ুন কবীরকে ধোবাউড়ায় বদলী করা হয়েছে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ দেলোয়ার হোসেন জানান, প্রতিবছর ৩০ জুন গুদামের বার্ষিক প্রতিবেদন হয়। এ উপলক্ষে ইউএনও মহোদয় গত ১ জুলাই খাদ্যগুদাম পরিদর্শন করেন। এ সময় গুদামে ধানের মজুদ অতিরিক্ত ও বস্তার মজুদে ঘাটতি ধরা পড়ে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে মোঃ হুমায়ুন কবীরকে বদলী করা হয়।
ইউএনও মোঃ খবিরুল আহসান মোবাইল ফোনে বলেন, বারহাট্টা উপজেলা সদরের খাদ্যগুদামে ১৪৬ দশমিক ০৮ টন ধান ও ৪২ হাজার ৯৬৭টি খালিবস্তা মজুদ রাখার নির্দেশনা রয়েছে। পরিদর্শনকালে গুদামে ১৫২ দশমিক ৫২ টন ধান ও ৩৮ হাজার ৫০০ খালিবস্তা পাওয়া যায়। অর্থাৎ, ধানের মজুদ ৯ দশমিক ৪৪০ টন অতিরিক্ত ও ৩০ কেজির খালি বস্তার মজুদ ৪ হাজার ৪৬৭টি কম ছিল। সরকারি বিধানে গুদামে নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কম বা বেশী মজুদ থাকার সুযোগ নেই। ধানের মজুদ বেশী ও বস্তার মজুদ কম থাকার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে ওসিএলএসডি মোঃ হুমায়ুন কবীর সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হন। পরে বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট করা হয়।
জানা যায়, ইউএনও মোঃ খবিরুল আহসান খাদ্যগুদাম পরিদর্শনে গিয়ে ওইদিন সকাল থেকে প্রায় ৪ঘন্টা সময় সেখানে অবস্থান করেন তিনি। পরে খাদ্যগুদামের সকল রেকর্কপত্র জব্দ করে তার দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বেশ কয়েকদিন ধরে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ দেলোয়ার হোসেন ও ওসিএলএসডি মোঃ হুমায়ুন কবীরসহ খাদ্যদপ্তরের অন্যান্যদের উপস্থিতিতে অনেকটা গোপনে গুদামের ধান, চাল ও বস্তার মজুদের হিসাব নীরিক্ষার কাজ চলে।
অভিযোগ উঠেছে, মোঃ হুমায়ুন কবীর একটি সিন্ডিকেট গঠন এবং তাদের যোগসাজশে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের সরবরাহ আদেশের (ডিও) চাল গুদামের ভিতরেই কিনে রেখে আবার মিলারদের নিকট বিক্রয় করে আসছিলেন। তিনি এক শ্রেণীর প্রান্তিক কৃষককে ম্যানেজ করে ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সংগ্রহ এবং তাদের নামে গুদামে ধান বিক্রি করছিলেন বলেও অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। গুদামে অতিরিক্ত মজুদ রাখা ধানও তার নিজের ক্রয় করা বলে অভিমত অনেকের। চলতিবছর বারহাট্টা খাদ্যগুদামে সরাসরি কৃষকের নিকট থেকে ১ হাজার ৮৯ টন ধান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত রয়েছে। তার মধ্যে ৯০% ধান ইতোমধ্যে ক্রয় করা হয়ে গেছে বলে জানা যায়। বিক্রয়কারীদের তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তাদের অনেকেই কৃষক না।
সরেজমিনে তদন্তে ওসিএলএসডি মোঃ হুমায়ুন কবীরের অনেক অনিয়ম বেরিয়ে আসবে বলে কেউ কেউ মনে করেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। তিনি কর্মস্থলে প্রায়শঃ উপস্থিত থাকেন না। তার অনিয়মিত তদারকির কারণে গুদামে নানা অপরাধ সংঘটিত হয়। জানতে চাইলে ওসিএলএসডি মোঃ হুমায়ুন কবীর ধানের অতিরিক্ত মজুদ ও বস্তার ঘাটতির কথা স্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, অতিরিক্ত মজুদ পাওয়া ধান ৩০ তারিখ ক্লোজিংয়ের পর কৃষকগণ গুদামে জমা দেন। এই ধানের বিল করা হয় নাই। ঘাটতি বস্তা চাল সরবরাহের জন্য মিলারদের দেওয়া হয়েছিল। সেই চাল গুদামে আসতে বিলম্ব হচ্ছে। বিশেষ ফাঁদে পড়ে এই অনিয়মের শিকার হয়েছেন বলেও জানান তিনি।তবে এর বাইরে ওনার মুঠো ফোন নাম্বারে বারবার চেষ্টা করেও ফোন না ধরায় এর বাইরে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।