
তৌফিকুর রহমান তাহের, সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ
আওয়ামিলীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক পরিবর্তনেও সুনামগঞ্জে লুটপাট থামেনি আজ অবধি। আজকাল দিনদুপুরে আনন্দ-উল্লাসে প্রকাশ্যে গত ৫ দিনে জেলার দিরাই ও শাল্লা উপজেলার ৭টি জলমহালের প্রায় ৫/৬কোটি টাকার মাছ লুট করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইজারাদাররা।জলমহালের আশপাশের অন্তত ১০-১৫টি গ্রামের ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ আনন্দ-উল্লাসে বিলের মাছ লুট করে নিয়ে গেছে।পুলিশ জানায়, কয়েক হাজার মানুষ একসঙ্গে জড়ো হওয়ায় প্রতিহত করাও সম্ভব হয়নি।
রমজান মাসে এমন কাজ করা ঠিক না বলে জানায় শাল্লার আটগাঁও গ্রামের সতুয়ার নদীর তীরে খোকন মিয়ার ছেলে রনি বিল্লাহ ও তার স্ত্রী কান্নাজড়িত কন্ঠে বিলাপ করে বিস্তারিত উনারা বলেন,বসতঘর, অটোরিকশা ভাঙচুর করে মোটর ও ব্যাটারি খুলে নিয়ে গেছে। তার ছোট ভাইয়ের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছে বলে জানিয়েছেন রনি বিল্লাল। এমন ঘটনায় আতঙ্কে আছেন হাওর অঞ্চলের জলমহাল ইজারাদার ও সংশ্লিষ্টরা।সতুয়াবিলের ইজারাদারগণ এনামুল মেম্বার,মোজাহিদ খানসহ অন্যন্যরা বলেন রমজান মাসে এররকম একটি অবৈধ, অনৈতিক কাজ করবে আমার একেবারে বোধগম্য নয়।ভাটী গাং এর ইজারাদার মকবুল হুসেন বলেন রোজা রমজানের মাসে এমন অমানবিক কাজের বিচার যেন আল্লাহতায়ালা করেন।
স্থানীয় লোকজন ও বিলের ইজারাদার জানান, দিরাই-শাল্লাসহ অন্যান্য উপজেলা এমন কি আরো কয়েকটি ডিস্ট্রিক্ট কামান ও লাইরা দীঘা,সতুয়া,ভাটি গাং জলমহালের মাছ লুটেসাথে জড়িত।
গত শুক্রবার সকালে দিরাই উপজেলার চরনাচর গ্রামের পাশের কামান বিলের মাছ জোর করে ধরে নেয় ৫০০ থেকে
৭০০ মানুষ। পরদিন শনিবার আবারও ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ বিভিন্ন যানবাহনে করে এসে মাছ লুটপাট চালায়। কামান বিলের ইজারাদার চরনারচর বিএম মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক সুধীর বিশ্বাস বলেন,আমরা সরকারকে প্রতিবছর ৫০ লাখ টাকার বেশি রাজস্ব দেই। দুই দিনে আমাদের বিলের প্রায় ২ কোটি টাকার মাছ লুট হয়েছে।
গত শনি ও রবিবার সকালে শাল্লার যাত্রাপুর গ্রামের পাশের জোয়ারিয়া বিলের মাছ ধরে নেয় ছব্বিশা, দামপুর, কান্দিগাঁও, ইয়ারাবাদ, কান্দকলা, রঘুনাথপুর, যাত্রাপুর গ্রামের কয়েকশ মানুষ। বিলের পাহারাদাররা জলমহালে থাকলেও প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। জোয়ারিয়া বিলের ইজারাদার যাত্রাপুর হিলিপ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি হিমাদ্রী সরকার বলেন, বিলে বাঁশ-কাঠা দেওয়া, পাহারাদার রাখাসহ প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।
রবিবার সকালে দিরাই উপজেলার মেঘনা জলমহালের একটি বিল ও একই উপজেলার আতনি বিলের (শাল্লা উপজেলার জয়পুর গ্রামের সামনে) মাছ ধরে নেয় হাজারো মানুষ। এরপর সোমবার দিরাই উপজেলার কাশীপুর লাইরা দীঘা গ্রুপ ফিশারির এলংজুরি ও আলীপুর গ্রামের পেছনের লাইরাদীঘা সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার শাল্লা উপজেলার আটগাঁও গ্রামের কাছের কাশীপুর লাইরা দীঘা গ্রুপ ফিশারির সতুয়া নদীর মাছ লুট করে দিরাই ও শাল্লাসহটি ৪-৫ হাজার মানুষ। গতকাল সকালে একই উপজেলার কাশীপুর গ্রামের কাছের বাইল্লা বিল ও ইয়ারাবাদ গ্রামের কাছের বড়গাঁও-ইয়ারাবাদ গ্রুপ জলমহালের ভাটিগাং বিল লুটপাট করে।
কাশীপুর লাইরা দীঘা গ্রুপ জলমহালের ইজারাদার উত্তর জারুলিয়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক প্রজেশ দাস বলেন, ‘এমন পরিস্থিতি জীবনেও দেখিনি। প্রতিবছর ৪৫ লাখ টাকা রাজস্ব দেই। তিন বছর অন্তর অন্তর মাছ ধরা হয়। আগামী বছর মাছ ধরার কথা থাকলেও এলাকার ১০-১৫ হাজার মানুষ দুই দিনে আমাদের জলমহালের কোটি টাকার বেশি মাছ লুটে নিয়ে গেছে। পুলিশকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে জানিয়েছি। শুনেছি আজ (বুধবার) আবারও নাকি মাছ ধরতে আসবে। ’
দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মেঘনা ও কামান বিলের মাছ ধরা প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল বলে জানা গেছে। এলাকার লোকজন কিছু বিলের মাছ ধরেছে। লাইরা দীঘা গ্রুপ ফিশারির পাইলের অংশে জোর করে মাছ ধরার অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জোয়ারিয়া বিলে মাছ ধরার খবর পেয়ে পুলিশ পাঠিয়ে লোকজনকে সরিয়ে দিয়েছি। লাইরা দীঘা জলমহালে একদিন কিছু লোক মাছ ধরেছে বলে জানা গেছে। হাজার হাজার লোক ভোরে মাছ ধরতে যায়। এসব বিল থানা থেকে অনেক দূরে, তাই পুলিশ যাওয়ার আগেই লোকজন চলে যায়। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’