
মদন প্রতিনিধি
নেত্রকোনার মদন উপজেলার আফরোজ এন্ড সন্স ও জাহাঙ্গীরপুর রাইচ মিল নামে চালকল দুটোর কার্যক্রম ৫ বছর ধরে বন্ধ। কিন্তু সেই দুইটি চালকল থেকে বছরের পর বছর ধরে চাল কিনছেন মদন খাদ্য গুদামের কর্মকর্তারা। বন্ধ চালকল খাদ্য গুদামের খাতায় সচল দেখানো হচ্ছে।
মদন খাদ্য গুদামের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এমন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ আছে- খাদ্য গুদামের যোগসাজসে একটি অসাধু চক্র দীর্ঘদিন ধরে এমন চাল কারসাজি চালিয়ে যাচ্ছে।
উপজেলা খাদ্যগুদাম কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বোরো মৌসুমে ১০২ মেট্রিকটন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারল করে খাদ্যগুদাম। ৭ই মে চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু করলে ৩০শে আগষ্ট শেষ হয়। এ বছর লক্ষমাত্রার ১০২ মেট্রিকটন চালের মধ্যে নির্ধারিত সময়ে ১০১ মেট্রিকটন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে আফরোজ এন্ড সন্স নামের চাউল মিল থেকে সংগ্রহ হয়েছে ৪০.৮০০ মেট্রিকটন। জাহাঙ্গীরপুর চাল মিল থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে ৪০.৪০০ মেট্রিকটন। ভাই ভাই নামের চাল মিল থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে ৩৩.৫০০ মেট্রিকটন। কিন্তু বাস্তবে ৫ বছর ধরে আফরোজ এন্ড সন্স ও জাহাঙ্গীরপুর রাইচ মিলের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। অপর দিকে একই অর্থ বছরে ১ হাজার ৪৬৭ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু লক্ষ্য মাত্রার এক ছটাক ধানও সংগ্রহ করেনি খাদ্যগুদাম।
বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) আফরোজ এন্ড সন্স ও জাহাঙ্গীরপুর চাল মিলে গেলে দেখা যায় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। চাল উৎপাদনের যন্ত্রপাতির কোন অস্থিত নেই। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দা ছদ্দু মিয়া, সাফায়েত হোসেনসহ অনেকেই জানান,‘এই দুইটি চাল মিল ৫ বছরের বেশী সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। মিলে এখন আর চাল উৎপাদন করা হয় না।
আফরোজ এন্ড সন্স ও জাহাঙ্গীরপুর চাল মিলের প্রোপাইটর দেওয়ান মুশফিকুর রহমান বলেন,‘ আমার দুইটি চাল মিল ৪/৫ বছর ধরে বন্ধ। আমার মিলে চাল উৎপাদন করি না। কিন্তু আপনার চাল মিল তো প্রতিবছর চাল উৎপাদন করছে এবং চলতি বছরও গুদামে চাল দিয়েছে। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘ আমি চাল দেয়নি। কিন্তু আমার মিলের নামে চাল কিভাবে কিনেছেন তা খাদ্যগুদাম বলতে পারবে।’
মদন খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু সালেক বলেন, আমাকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আমি সেই অনুযায়ী কিনেছি। এর বাইরে আমি কিছু জানি না। এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে প্রশ্ন করুন। তিনিই বরাদ্দ দিয়ে থাকেন।
মদন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শেখ হোসেন সানোয়ার জানান, আমরা সচল মিল থেকেই চাল সংগ্রহ করেছি। কিন্তু আফরোজ এন্ড সন্স ও জাহাঙ্গীরপুর রাইচ মিলের কার্যক্রম ৫ বছর ধরে বন্ধ থাকলেও কিভাবে চাল উৎপাদন করছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান,‘ আমি দেখেছি এই দুইটি চাল মিলের কার্যক্রম চালু হয়েছে।
উপজেলা ধান ও চাল ক্রয় কমিটির সভাপতি (ইউএনও) মো. শাহ আলম মিয়া বলেন,‘চাল সংগ্রহ করা হলেও ধান সংগ্রহ করা হয়নি। চাল সংগ্রহে যদি কোন রকম অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে তদন্ত করে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’