ঢাকা , শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫, ৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনামঃ
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস নেত্রকোনা-৩ মনোনীত প্রার্থীর কেন্দুয়া আলেম উলামাদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত  ——- ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় আপিলের রায় ৪ সেপ্টেম্বর মানুষের পাশে দাঁড়ানোই মগড়া বাঁধন সংগঠনের কাজ আটপাড়ায় নাজিরগঞ্জ বাজারে অবৈধ জুয়ার আসর নেত্রকোনার কলমাকান্দায় আনন্দপুরকে মডেল ইউনিয়নে উন্নীতকরণের দাবিতে মানববন্ধন দেশে যত বড় চাঁদাবাজই থাকুক, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। স্বারাষ্ট্র উপদেষ্টা পানছড়ি সীমান্তে ভারতীয় সালসা জব্দ নেত্রকোণা জেলায় ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগ জুন-২০২৫ কার্যক্রমের ১ম দিনের কার্যক্রম সম্পন্ন মাটিরাঙ্গায় সেনাবাহিনীর বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও সহায়তা প্রদান সিধলী বাজারে বাপ্পি কবির ও যুবদল নেতার নেতৃত্বে ২৫-২৭ জনের সশস্ত্র হামলা

বাবা-স্বামীর চুরির লজ্জা, ফাঁস নিল ১৪ বছরের সুমাইয়া—এক নিষ্পাপ প্রাণের আত্মাহুতি

 

মোঃ মমিন ইসলাম বড়াইগ্রাম উপজেলা প্রতিনিধি 

 

 

রাতের আঁধারে চুরি করল স্বামী ও শ্বশুর, সকালে জানাজানি হলো গোটা গ্রামে, আর দিনের আলো ফোটার আগেই অপমান-অভিমান সইতে না পেরে প্রাণ দিল ১৪ বছরের এক কিশোরী—সুমাইয়া খাতুন।

 

ঘটনাটি নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার দ্বারিকুশী বাবুপাড়া গ্রামে।

 

জানা গেছে, গত ২১ মে গভীর রাতে পাশের চন্ডিপুর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ মাহবুব হোসেনের পুকুর থেকে মাছ চুরি করে আনেন সুমাইয়ার স্বামী মোঃ সুরুজ মণ্ডল ও শ্বশুর মোঃ আব্দুল করিম। সকালে বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রামজুড়ে রটে যায় ঘটনার খবর। পুকুর মালিক মাহবুব হোসেন স্থানীয়দের নিয়ে সুরুজের বাড়িতে গিয়ে চুরিকৃত মাছ জব্দ করেন।

 

এই অপমান ও সামাজিক চাপে ভেঙে পড়ে সুমাইয়া। সকাল সাড়ে দশটার দিকে নিজের ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে সে।

 

সেদিনই ঘটনাটি ‘অপমৃত্যু’ হিসেবে থানায় নথিভুক্ত হয়। কিন্তু ঘটনার প্রায় এক মাস পরে, সুমাইয়ার স্বামী সুরুজ ও তার শ্বশুর পুকুর মালিক মাহবুব হোসেনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা করেন।

 

অন্যদিকে, সুমাইয়ার বাবা করিমও নিজের জামাই সুরুজ ও একই পুকুর মালিক মাহবুবের বিরুদ্ধে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। তবে এলাকাবাসীর দাবি, করিম নিজেও মাছ চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

 

সুরুজের পরিবারের একাংশও তার অপকর্মের বিষয় স্বীকার করে নিচ্ছেন। তার চাচা মোঃ ফজলু, চাচাতো ভাই মোঃ সেলিম, জেঠাতো ভাই মোঃ রুবেল ও প্রতিবেশী মোঃ সাহিন বলেন,

“সুরুজ অনেক দিন ধরেই চুরির সঙ্গে জড়িত। আমরা বহুবার বুঝিয়েছি, সে ফেরেনি। সেদিন পুকুর থেকে ধরা মাছ তার হাতেই ছিল। তার কারণেই এক নিষ্পাপ প্রাণ চলে গেল। আমরা চাই সঠিক বিচার হোক।”

 

এ বিষয়ে বড়াইগ্রাম থানার ওসি গোলাম সারওয়ার হোসেন বলেন,

“একাধিক পক্ষ মামলা করেছে। সবগুলো অভিযোগ তদন্তাধীন। সত্য উদঘাটন করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

 

একটি মাছ চুরির ঘটনা আজ夺ে ফেলেছে একটি কিশোরী প্রাণ। সুমাইয়া কোনো অপরাধ করেনি, তবু তাকে মরতে হলো স্বামী ও বাবার পাপ ঢাকতে গিয়ে।

এই মৃত্যু শুধু এক মেয়ের নয়—এটি সমাজের আত্মাকে নাড়িয়ে দেওয়া এক অঘোষিত রায়:

অপরাধ যদি পরিবারে জন্ম নেয়, শাস্তি পায় সেই পরিবারের নিষ্পাপ সন্তানরা।

ট্যাগঃ
জনপ্রিয় সংবাদ

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস নেত্রকোনা-৩ মনোনীত প্রার্থীর কেন্দুয়া আলেম উলামাদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত  ——-

বাবা-স্বামীর চুরির লজ্জা, ফাঁস নিল ১৪ বছরের সুমাইয়া—এক নিষ্পাপ প্রাণের আত্মাহুতি

আপডেট টাইমঃ ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫

 

মোঃ মমিন ইসলাম বড়াইগ্রাম উপজেলা প্রতিনিধি 

 

 

রাতের আঁধারে চুরি করল স্বামী ও শ্বশুর, সকালে জানাজানি হলো গোটা গ্রামে, আর দিনের আলো ফোটার আগেই অপমান-অভিমান সইতে না পেরে প্রাণ দিল ১৪ বছরের এক কিশোরী—সুমাইয়া খাতুন।

 

ঘটনাটি নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার দ্বারিকুশী বাবুপাড়া গ্রামে।

 

জানা গেছে, গত ২১ মে গভীর রাতে পাশের চন্ডিপুর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ মাহবুব হোসেনের পুকুর থেকে মাছ চুরি করে আনেন সুমাইয়ার স্বামী মোঃ সুরুজ মণ্ডল ও শ্বশুর মোঃ আব্দুল করিম। সকালে বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রামজুড়ে রটে যায় ঘটনার খবর। পুকুর মালিক মাহবুব হোসেন স্থানীয়দের নিয়ে সুরুজের বাড়িতে গিয়ে চুরিকৃত মাছ জব্দ করেন।

 

এই অপমান ও সামাজিক চাপে ভেঙে পড়ে সুমাইয়া। সকাল সাড়ে দশটার দিকে নিজের ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে সে।

 

সেদিনই ঘটনাটি ‘অপমৃত্যু’ হিসেবে থানায় নথিভুক্ত হয়। কিন্তু ঘটনার প্রায় এক মাস পরে, সুমাইয়ার স্বামী সুরুজ ও তার শ্বশুর পুকুর মালিক মাহবুব হোসেনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা করেন।

 

অন্যদিকে, সুমাইয়ার বাবা করিমও নিজের জামাই সুরুজ ও একই পুকুর মালিক মাহবুবের বিরুদ্ধে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। তবে এলাকাবাসীর দাবি, করিম নিজেও মাছ চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

 

সুরুজের পরিবারের একাংশও তার অপকর্মের বিষয় স্বীকার করে নিচ্ছেন। তার চাচা মোঃ ফজলু, চাচাতো ভাই মোঃ সেলিম, জেঠাতো ভাই মোঃ রুবেল ও প্রতিবেশী মোঃ সাহিন বলেন,

“সুরুজ অনেক দিন ধরেই চুরির সঙ্গে জড়িত। আমরা বহুবার বুঝিয়েছি, সে ফেরেনি। সেদিন পুকুর থেকে ধরা মাছ তার হাতেই ছিল। তার কারণেই এক নিষ্পাপ প্রাণ চলে গেল। আমরা চাই সঠিক বিচার হোক।”

 

এ বিষয়ে বড়াইগ্রাম থানার ওসি গোলাম সারওয়ার হোসেন বলেন,

“একাধিক পক্ষ মামলা করেছে। সবগুলো অভিযোগ তদন্তাধীন। সত্য উদঘাটন করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

 

একটি মাছ চুরির ঘটনা আজ夺ে ফেলেছে একটি কিশোরী প্রাণ। সুমাইয়া কোনো অপরাধ করেনি, তবু তাকে মরতে হলো স্বামী ও বাবার পাপ ঢাকতে গিয়ে।

এই মৃত্যু শুধু এক মেয়ের নয়—এটি সমাজের আত্মাকে নাড়িয়ে দেওয়া এক অঘোষিত রায়:

অপরাধ যদি পরিবারে জন্ম নেয়, শাস্তি পায় সেই পরিবারের নিষ্পাপ সন্তানরা।