ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনামঃ
সংস্কারের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ গঠন করতে চায় এনসিপি নেতারা  লালপুরে সেনাবাহিনীর অভিযানে পদ্মা নদীর পাড়ে অবৈধ মাটি উত্তোলন বন্ধ — কৃষকের মুখে স্বস্তির হাসি ভোলাহাট উপজেলার জামবাড়িয়া কৃষ্ণপুর বিলগুলদাহ রাস্তার বেহাল অবস্থা সৌদি আরব এক সপ্তাহে ৮,০৫১ জন অবৈধ অভিবাসীকে বহিষ্কার করেছে। বাগাতিপাড়ায় গাঁজাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক করেছে সেনাবাহিনী **সেনাবাহিনীর অভিযানে অনলাইন জুয়ার এজেন্ট গ্রেফতার নাচোলে কথা দিয়ে কেউ কথা রাখেনি রাস্তা মেরামতে নেমেছে এলাকাবাসী বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলার রাজনীতিতে এক সুপরিচিত ও নির্ভরযোগ্য নাম আহসান হাবীব (ঠান্ডু)। পানছড়িতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের ৯ দিনব্যাপী উল্টো রথযাত্রা উৎসব শেষ হলো সোহম দাস হাওর পাড়ের শিশুদের অনুপ্রের

বাবা-স্বামীর চুরির লজ্জা, ফাঁস নিল ১৪ বছরের সুমাইয়া—এক নিষ্পাপ প্রাণের আত্মাহুতি

 

মোঃ মমিন ইসলাম বড়াইগ্রাম উপজেলা প্রতিনিধি 

 

 

রাতের আঁধারে চুরি করল স্বামী ও শ্বশুর, সকালে জানাজানি হলো গোটা গ্রামে, আর দিনের আলো ফোটার আগেই অপমান-অভিমান সইতে না পেরে প্রাণ দিল ১৪ বছরের এক কিশোরী—সুমাইয়া খাতুন।

 

ঘটনাটি নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার দ্বারিকুশী বাবুপাড়া গ্রামে।

 

জানা গেছে, গত ২১ মে গভীর রাতে পাশের চন্ডিপুর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ মাহবুব হোসেনের পুকুর থেকে মাছ চুরি করে আনেন সুমাইয়ার স্বামী মোঃ সুরুজ মণ্ডল ও শ্বশুর মোঃ আব্দুল করিম। সকালে বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রামজুড়ে রটে যায় ঘটনার খবর। পুকুর মালিক মাহবুব হোসেন স্থানীয়দের নিয়ে সুরুজের বাড়িতে গিয়ে চুরিকৃত মাছ জব্দ করেন।

 

এই অপমান ও সামাজিক চাপে ভেঙে পড়ে সুমাইয়া। সকাল সাড়ে দশটার দিকে নিজের ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে সে।

 

সেদিনই ঘটনাটি ‘অপমৃত্যু’ হিসেবে থানায় নথিভুক্ত হয়। কিন্তু ঘটনার প্রায় এক মাস পরে, সুমাইয়ার স্বামী সুরুজ ও তার শ্বশুর পুকুর মালিক মাহবুব হোসেনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা করেন।

 

অন্যদিকে, সুমাইয়ার বাবা করিমও নিজের জামাই সুরুজ ও একই পুকুর মালিক মাহবুবের বিরুদ্ধে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। তবে এলাকাবাসীর দাবি, করিম নিজেও মাছ চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

 

সুরুজের পরিবারের একাংশও তার অপকর্মের বিষয় স্বীকার করে নিচ্ছেন। তার চাচা মোঃ ফজলু, চাচাতো ভাই মোঃ সেলিম, জেঠাতো ভাই মোঃ রুবেল ও প্রতিবেশী মোঃ সাহিন বলেন,

“সুরুজ অনেক দিন ধরেই চুরির সঙ্গে জড়িত। আমরা বহুবার বুঝিয়েছি, সে ফেরেনি। সেদিন পুকুর থেকে ধরা মাছ তার হাতেই ছিল। তার কারণেই এক নিষ্পাপ প্রাণ চলে গেল। আমরা চাই সঠিক বিচার হোক।”

 

এ বিষয়ে বড়াইগ্রাম থানার ওসি গোলাম সারওয়ার হোসেন বলেন,

“একাধিক পক্ষ মামলা করেছে। সবগুলো অভিযোগ তদন্তাধীন। সত্য উদঘাটন করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

 

একটি মাছ চুরির ঘটনা আজ夺ে ফেলেছে একটি কিশোরী প্রাণ। সুমাইয়া কোনো অপরাধ করেনি, তবু তাকে মরতে হলো স্বামী ও বাবার পাপ ঢাকতে গিয়ে।

এই মৃত্যু শুধু এক মেয়ের নয়—এটি সমাজের আত্মাকে নাড়িয়ে দেওয়া এক অঘোষিত রায়:

অপরাধ যদি পরিবারে জন্ম নেয়, শাস্তি পায় সেই পরিবারের নিষ্পাপ সন্তানরা।

ট্যাগঃ
জনপ্রিয় সংবাদ

সংস্কারের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ গঠন করতে চায় এনসিপি নেতারা 

বাবা-স্বামীর চুরির লজ্জা, ফাঁস নিল ১৪ বছরের সুমাইয়া—এক নিষ্পাপ প্রাণের আত্মাহুতি

আপডেট টাইমঃ ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫

 

মোঃ মমিন ইসলাম বড়াইগ্রাম উপজেলা প্রতিনিধি 

 

 

রাতের আঁধারে চুরি করল স্বামী ও শ্বশুর, সকালে জানাজানি হলো গোটা গ্রামে, আর দিনের আলো ফোটার আগেই অপমান-অভিমান সইতে না পেরে প্রাণ দিল ১৪ বছরের এক কিশোরী—সুমাইয়া খাতুন।

 

ঘটনাটি নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার দ্বারিকুশী বাবুপাড়া গ্রামে।

 

জানা গেছে, গত ২১ মে গভীর রাতে পাশের চন্ডিপুর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ মাহবুব হোসেনের পুকুর থেকে মাছ চুরি করে আনেন সুমাইয়ার স্বামী মোঃ সুরুজ মণ্ডল ও শ্বশুর মোঃ আব্দুল করিম। সকালে বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রামজুড়ে রটে যায় ঘটনার খবর। পুকুর মালিক মাহবুব হোসেন স্থানীয়দের নিয়ে সুরুজের বাড়িতে গিয়ে চুরিকৃত মাছ জব্দ করেন।

 

এই অপমান ও সামাজিক চাপে ভেঙে পড়ে সুমাইয়া। সকাল সাড়ে দশটার দিকে নিজের ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে সে।

 

সেদিনই ঘটনাটি ‘অপমৃত্যু’ হিসেবে থানায় নথিভুক্ত হয়। কিন্তু ঘটনার প্রায় এক মাস পরে, সুমাইয়ার স্বামী সুরুজ ও তার শ্বশুর পুকুর মালিক মাহবুব হোসেনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা করেন।

 

অন্যদিকে, সুমাইয়ার বাবা করিমও নিজের জামাই সুরুজ ও একই পুকুর মালিক মাহবুবের বিরুদ্ধে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। তবে এলাকাবাসীর দাবি, করিম নিজেও মাছ চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

 

সুরুজের পরিবারের একাংশও তার অপকর্মের বিষয় স্বীকার করে নিচ্ছেন। তার চাচা মোঃ ফজলু, চাচাতো ভাই মোঃ সেলিম, জেঠাতো ভাই মোঃ রুবেল ও প্রতিবেশী মোঃ সাহিন বলেন,

“সুরুজ অনেক দিন ধরেই চুরির সঙ্গে জড়িত। আমরা বহুবার বুঝিয়েছি, সে ফেরেনি। সেদিন পুকুর থেকে ধরা মাছ তার হাতেই ছিল। তার কারণেই এক নিষ্পাপ প্রাণ চলে গেল। আমরা চাই সঠিক বিচার হোক।”

 

এ বিষয়ে বড়াইগ্রাম থানার ওসি গোলাম সারওয়ার হোসেন বলেন,

“একাধিক পক্ষ মামলা করেছে। সবগুলো অভিযোগ তদন্তাধীন। সত্য উদঘাটন করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

 

একটি মাছ চুরির ঘটনা আজ夺ে ফেলেছে একটি কিশোরী প্রাণ। সুমাইয়া কোনো অপরাধ করেনি, তবু তাকে মরতে হলো স্বামী ও বাবার পাপ ঢাকতে গিয়ে।

এই মৃত্যু শুধু এক মেয়ের নয়—এটি সমাজের আত্মাকে নাড়িয়ে দেওয়া এক অঘোষিত রায়:

অপরাধ যদি পরিবারে জন্ম নেয়, শাস্তি পায় সেই পরিবারের নিষ্পাপ সন্তানরা।