
নিজস্ব প্রতিবেদক
গ্রামবাংলার আঙিনায়, খেজুর পাতার ছায়ায় বসে ধোঁয়ার কুন্ডলিতে ঘেরা একখানা স্মৃতি—হুক্কা। এক সময় বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে পুরুষ কিংবা নারীদের আড্ডার অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ ছিল এটি। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার মুখে উঠোনে পিঁড়ি পেতে বসে একসাথে হুক্কা টানতেন বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠরা। পাশে থাকতো চায়ের কাপ, বাতাসে ভেসে বেড়াতো ধোঁয়া আর গল্প।
হুক্কা শুধু ধোঁয়া নয়, ছিল এক সংস্কৃতি
হুক্কা ছিলো যোগাযোগের মাধ্যম। খোঁজখবর, পাড়া-প্রতিবেশীর খুশি-দুঃখ ভাগাভাগির ক্ষেত্র। গ্রামের মোড়ল থেকে শুরু করে সাধারণ কৃষক, এমনকি অনেক নারীও হুক্কার মুখে মুখ লাগিয়ে নিয়েছেন একটান। নানা মশলার গন্ধে হুক্কার তামাক ছিল ঘরোয়া—গোলা ঘরের এক কোণে শুকানো পাতার গন্ধ এখনও অনেকের স্মৃতিতে জেগে আছে।
নারীরাও ছিলো অংশী
যদিও অনেকে ভাবতে পারেন হুক্কা শুধু পুরুষদের, বাস্তবে অনেক অঞ্চলে বৃদ্ধ মায়েরা, দাদিরাও ঘরের কোণে বসে হুক্কা টানতেন। পর্দার আড়ালেই হয়তো, কিন্তু হুক্কার ধোঁয়ায় তারাও মিশিয়ে দিতেন জীবনের গল্প।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে গেছে ঐতিহ্য
আজ আর সেই দৃশ্য দেখা যায় না। প্রযুক্তি, তড়িৎ জীবনধারা, স্বাস্থ্য সচেতনতা আর আধুনিকতার ঢেউয়ে হারিয়ে গেছে হুক্কার ধোঁয়া। পুরনো কোনো বাড়িতে কিংবা জাদুঘরের কোণে পড়ে থাকতে পারে একটি হুক্কা, ধুলোমলিন অবস্থায়। কিন্তু তার ঘ্রাণ, তার ধোঁয়ার নাচন, মানুষের মনে আজও এক রকম আলোড়ন তোলে।
“আহা, সেই দিনগুলো…”
৮০ বছর বয়সী রহিম উদ্দিন বলেন, “একসময় হুক্কা ছাড়া সন্ধ্যা যেন হতোই না। জমি-জমা, বিয়ে-শাদী, এমনকি গ্রামের রাজনীতিও চলতো হুক্কার পাশে বসে। এখন আর কিছুই নেই… শুধু স্মৃতি।”